Skip to product information
1 of 1

সব কিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে

সব কিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে

Regular price Tk 112.00 BDT
Regular price Tk 150.00 BDT Sale price Tk 112.00 BDT
Sale Sold out
Shipping calculated at checkout.

"সব কিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে" হুমায়ুন আজাদের একটি অত্যন্ত প্রভাবশালী এবং চিন্তাশীল প্রবন্ধগ্রন্থ, যা ২০০৪ সালে প্রকাশিত হয়। এই বইটি হুমায়ুন আজাদের বিদ্রূপাত্মক, তীক্ষ্ণ এবং বুদ্ধিদীপ্ত লেখার আরও একটি উদাহরণ। বইটির নাম থেকেই বোঝা যায় যে লেখক সমাজের নানা অস্থিরতা, রাজনৈতিক দুর্নীতি, এবং মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয় নিয়ে সরাসরি তীব্র সমালোচনা করেছেন।

বইটির সারাংশ:

"সব কিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে" বইটিতে হুমায়ুন আজাদ দেশের রাজনীতি, ধর্মীয় গোঁড়ামি, সামাজিক অবক্ষয় এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতা নিয়ে তার নিরীক্ষণ প্রকাশ করেছেন। তিনি একটি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এই প্রশ্ন তোলেন যে, আমরা কি আসলে এমন একটি সমাজ বা রাষ্ট্র চাই, যেখানে সব কিছু দুর্নীতিবাজ, নিষ্ঠুর, ও অমানবিক শক্তির হাতে চলে যাবে? তিনি দেখিয়েছেন, বর্তমান সময়ে রাজনৈতিক, সামাজিক, এবং ধর্মীয় শক্তিগুলোর হাতে আমাদের ভবিষ্যত চলে যাচ্ছে এবং আমরা কোনোভাবেই এটি প্রতিরোধ করতে পারছি না।

বইটির মধ্যে আজাদ তার লেখনীর মাধ্যমে সমাজের নৈতিক বিপর্যয়ের প্রতি এক গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি যে সমাজে বসবাস করছেন, সেই সমাজের প্রতি তার একটি তীব্র প্রতিবাদ রয়েছে, এবং তিনি বিশ্বাস করেন যে, সব কিছু শেষ পর্যন্ত "নষ্টদের" হাতে চলে যাবে, অর্থাৎ যারা ক্ষমতার অপব্যবহার করছে, যারা সমাজের শোষণ করছে, তাদেরই এই পৃথিবী দখল করবে।

বইটির প্রধান বিষয়:

1. রাজনৈতিক দুর্নীতি এবং অস্থিরতা: এই বইতে আজাদ বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন যে, দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে এত বড় মাত্রায় দুর্নীতি চলছে যে, সমাজের পক্ষে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তিনি মনে করেন, যখন সমাজের নীতিবোধ দুর্বল হয়, তখন নষ্ট শক্তির আধিপত্য বেড়ে যায়।


2. ধর্মীয় মৌলবাদ: হুমায়ুন আজাদ ধর্মীয় মৌলবাদী শক্তির বিরুদ্ধে তার বিরোধিতা এবং উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন কীভাবে ধর্মের নামে আমাদের সমাজে অন্ধবিশ্বাস, সহিংসতা এবং সাম্প্রদায়িকতার বীজ ছড়ানো হচ্ছে। ধর্মের মাধ্যমে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধন এবং মানুষের মৌলিক অধিকার হরণের ব্যাপারে আজাদ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।


3. সামাজিক অবক্ষয়: সামাজিক অবক্ষয়ের একটি বড় দিক হলো মানুষের নৈতিকতা হারানো। সমাজে এক ধরনের অসহিষ্ণুতা এবং অমানবিকতা বেড়ে গেছে, যার কারণে মানুষের মাঝে একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা ও সহানুভূতি কমে গেছে। হুমায়ুন আজাদ এই সমস্যার গভীরতা তুলে ধরে তা পরিবর্তনের জন্য একটি নতুন সমাজ ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছেন।


4. নষ্ট শক্তির আধিপত্য: বইটির নাম থেকেই বোঝা যায়, হুমায়ুন আজাদ সমাজের ওই নষ্ট শক্তির আধিপত্যের বিষয়ে লিখেছেন। "সব কিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে" — এই উক্তি মূলত আমাদের সমাজের প্রতি একটি তীব্র সতর্কবার্তা। তাঁর মতে, যাদের কাছে দেশ বা সমাজের ভবিষ্যত ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে, তারা কখনই জনগণের কল্যাণে কাজ করবে না, বরং নিজেদের স্বার্থকেই এগিয়ে নেবে।



লেখার শৈলী:

হুমায়ুন আজাদের লেখার শৈলী অত্যন্ত তীক্ষ্ণ, বিদ্রূপপূর্ণ এবং ভাবনার উদ্রেককারী। তিনি সমাজের বিভিন্ন সমস্যার প্রতি স্পষ্টভাবে কড়া সমালোচনা করেছেন, কিন্তু একই সাথে তিনি কখনও কখনও রসিকতা বা ব্যঙ্গের মাধ্যমে তার বক্তব্য তুলে ধরেন, যা পাঠককে একইসঙ্গে ভাবিয়ে তোলে এবং আনন্দিতও করে। আজাদ কখনো সরলভাবে লেখেন না; তিনি জটিল ও গভীর চিন্তাভাবনার মাধ্যমে পাঠকদের কাছে তার মতামত পৌঁছানোর চেষ্টা করেন।

সমালোচনা:

বইটি পাঠকদের মধ্যে কিছুটা বিতর্ক সৃষ্টি করেছে, কারণ হুমায়ুন আজাদ তাঁর লেখায় খুবই তীব্র ভাষায় সমাজ এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতির সমালোচনা করেছেন। তার এই লেখার ধরণ কখনো কখনো খুবই কঠিন বা নৈরাশ্যবাদী মনে হতে পারে। কিছু পাঠক মনে করেছেন যে, লেখক খুব একপেশে বা অতিরিক্ত হতাশাজনক দেখাতে চেয়েছেন, তবে যারা সমাজের প্রতি সৎ ও গভীর দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করতে চান, তাদের জন্য এটি এক অমূল্য গ্রন্থ।

উপসংহার:

"সব কিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে" একটি প্রভাবশালী এবং চিন্তাশীল বই, যা সমাজের নানা অন্ধকার দিককে স্পষ্টভাবে তুলে ধরে। এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক, ধর্মীয় এবং সামাজিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এবং এক নতুন সমাজের জন্য এক সাহসী আহ্বান জানিয়েছে। হুমায়ুন আজাদ তার এই বইয়ের মাধ্যমে পাঠকদের ভাবাতে এবং তাদের চিন্তাভাবনায় পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেছেন। যারা বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন, তাদের জন্য এটি একটি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক এবং গুরুত্বপূর্ণ পাঠ্য।

View full details