Skip to product information
ওরিয়েন্টালিজম

ওরিয়েন্টালিজম

Tk 350.00 Tk 500.00

Reliable shipping

Flexible returns

"ওরিয়েন্টালিজম" – এডওয়ার্ড ডব্লিউ. সাঈদ এর বইয়ের বাংলা পর্যালোচনা

এডওয়ার্ড ডব্লিউ. সাঈদের "ওরিয়েন্টালিজম" (Orientalism) আধুনিক কল্পনা, ইতিহাস, এবং ক্ষমতার সম্পর্ক নিয়ে একটি বৈপ্লবিক বই। এটি বিশেষ করে পাশ্চাত্য (পশ্চিম) ও পূর্বের (অথবা 'ওরিয়েন্ট'—এশিয়া, উত্তর আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্য) মধ্যে বর্ণিত সম্পর্ক এবং সেই সম্পর্কের মাধ্যমে তৈরি হওয়া কল্পনা, রাজনৈতিক শক্তি ও আধিপত্যের প্রশ্নগুলোকে গভীরভাবে বিশ্লেষণ করে। ১৯৭৮ সালে প্রথম প্রকাশিত হওয়া এই বইটি একে অপরের পরিপূরক দুটি ধারণার – 'ওরিয়েন্টালিজম' এবং 'পশ্চিমা আধিপত্য' – সংযোগ প্রতিষ্ঠা করে এবং ইতিহাসের অজ্ঞাত বা অবহেলিত দিকগুলোর প্রতি আলোকপাত করে।

বইয়ের সারসংক্ষেপ:

ওরিয়েন্টালিজম বইটি মূলত পশ্চিমা বিশ্বে মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া এবং উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোকে কিভাবে দেখা হয়েছে এবং কিভাবে এই অঞ্চলের সংস্কৃতি ও ইতিহাসের বিকৃত উপস্থাপন করা হয়েছে তা বিশ্লেষণ করে। সাঈদ তার গবেষণায় দেখান, কিভাবে পশ্চিমা বিশ্বের দৃষ্টিভঙ্গি ও তার ক্ষমতার কাঠামো 'ওরিয়েন্ট' (পূর্ব) সম্পর্কে এক ধরনের মিথ তৈরির কাজ করেছে, যার মধ্যে পূর্বকে চরমভাবে রহস্যময়, বিকৃত এবং নীচু হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে, তিনি উন্মোচন করেন যে, ওরিয়েন্টালিজম কেবল একটি বৈজ্ঞানিক ধারণা নয়, বরং এটি একটি রাজনৈতিক কৌশল, যা পশ্চিমাদের তাদের উপনিবেশী ক্ষমতা ও আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে সহায়তা করেছে।

সাঈদ এই বইয়ে প্রধানত তিনটি মূল ধারণা তুলে ধরেছেন:

1. ওরিয়েন্টালিজম (Orientalism) কী?: সাঈদ দেখান, "ওরিয়েন্টালিজম" হল পশ্চিমা সমাজের পূর্বের (বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা এবং এশিয়া) সম্পর্কে যে ধারণাগুলি গড়ে উঠেছে এবং যা পূর্বের সংস্কৃতি, মানুষ, ইতিহাস ও ভূগোলকে বিকৃত করে পশ্চিমাদের সুবিধার্থে উপস্থাপন করেছে।


2. পশ্চিমের আধিপত্য ও উপনিবেশীকরণ: সাঈদ দাবি করেন, পশ্চিমা দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তিতে তৈরি হওয়া এই ওরিয়েন্টালিজম শুধুমাত্র একটি শাস্ত্রীয় অধ্যায় নয়, বরং এটি উপনিবেশীকরণের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে, যার মাধ্যমে পশ্চিমারা পূর্বের সমাজকে শাসন ও শোষণ করেছে।


3. এটি সমাজের উপরে কতটা প্রভাব বিস্তার করেছে: সাঈদ তাঁর বইতে বিশ্লেষণ করেন, কীভাবে এই ধারণাগুলি ইতিহাস, সাহিত্য, শিল্পকলা এবং গবেষণার বিভিন্ন শাখায় ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলেছে এবং পশ্চিমা শক্তির প্রভাবশালী শক্তিরূপে প্রতিষ্ঠিত করেছে।



বইটির মূল বিষয়বস্তু:

1. পূর্ব ও পশ্চিমের কল্পিত সম্পর্ক: সাঈদ দেখান যে, 'ওরিয়েন্ট' বা 'পূর্ব' সবসময় পশ্চিমের চোখে একটি রহস্যময়, অপ্রতিরোধ্য, এবং প্রাচীন জগত হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছে, যা পশ্চিমের আধুনিক, উন্নত এবং ‘সভ্য’ সমাজের বিপরীতে দাঁড়িয়ে। এই ধারণাগুলি ইতিহাসে নানা রূপে প্রবাহিত হয়েছে, যেমন শিল্প, সাহিত্য, এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণার মাধ্যমে।


2. পশ্চিমের সৃষ্ট এক একতরফা কল্পনা: পশ্চিমারা তার উপনিবেশীকরণের কাজে 'ওরিয়েন্টালিজম' ধারণার উপকারিতা গ্রহণ করেছে, যাতে তারা পূর্বের সমাজকে দুর্বল, অন্ধকারাচ্ছন্ন, এবং প্রাকৃতিকভাবে অবিশ্বাস্য হিসেবে দেখাতে পারে। এর মাধ্যমে তাদের উপনিবেশী আধিপত্যকে জাস্টিফাই করা হয়েছে।


3. দ্বন্দ্বমূলক সম্পর্ক: বইটি একদিকে পশ্চিম ও পূর্বের সম্পর্কের মধ্যে গড়ে ওঠা দ্বন্দ্ব এবং অপর দিকে, সেই সম্পর্কের মাধ্যমে পূর্বের সভ্যতার প্রতি যে অবজ্ঞা এবং অপমান সৃষ্টি হয়েছে, তা তুলে ধরেছে। এটি সমাজতাত্ত্বিক এবং রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।



পর্যালোচনা:

ওরিয়েন্টালিজম বইটি শুধু একটি দার্শনিক বা ঐতিহাসিক গ্রন্থ নয়, বরং এটি আধুনিক সমাজের কিছু বড় প্রশ্নের প্রতি একটি অগ্নেয় দৃষ্টিপাত। সাঈদ তার বইটিতে পূর্ব এবং পশ্চিমের সম্পর্কের গভীরে প্রবেশ করে, সেই সম্পর্কের প্রতিটি প্রান্ত এবং দিক তুলে ধরেছেন। এর মাধ্যমে, তিনি পশ্চিমা শক্তির কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি এবং ইতিহাসের অপব্যাখ্যা করতে গিয়ে পৃথিবীজুড়ে আদান-প্রদানের নানান সংস্কৃতি ও সভ্যতাকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, তা আড়াল করেছেন।

বইটি মূলত ইতিহাস, রাজনৈতিক বিজ্ঞান, সমাজতত্ত্ব, এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের পাঠকদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে, এটি কেবল ইতিহাসের পঠিত পাঠ নয়, বরং বর্তমান বিশ্বে ক্ষমতার সম্পর্ক এবং সাম্রাজ্যবাদের প্রভাব নিয়ে চিন্তা করার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

উপসংহার:

ওরিয়েন্টালিজম বইটি একটি ঐতিহাসিক, দার্শনিক এবং রাজনৈতিক কৃতিত্ব, যা আজও বিশ্বের অনেক জাতির জন্য একটি অবিচ্ছেদ্য পাঠ্য। এডওয়ার্ড সাঈদ তাঁর গবেষণার মাধ্যমে এই ধারণাকে ফুটিয়ে তুলেছেন যে, কীভাবে পশ্চিমা সমাজ পূর্বকে ‘অপর’ হিসেবে চিহ্নিত করে তার আধিপত্য বিস্তার করেছে। এই বইটি আধুনিক পৃথিবীর রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, এবং ঐতিহাসিক চিন্তাভাবনার প্রতি গভীর দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করতে সহায়তা করে এবং শক্তিশালী উপনিবেশবাদী ধারনার সমালোচনা করে।

You may also like