ওঙ্কার - আহমদ ছফা
ওঙ্কার - আহমদ ছফা
Share
"ওঙ্কার" আহমদ ছফার প্রথম উপন্যাস, যা ১৯৭৫ সালে প্রকাশিত হয়। এটি বাংলা সাহিত্যে একটি অনন্য সংযোজন, যেখানে তিনি সমাজের শোষণ, শ্রেণিসংঘাত, এবং গ্রামীণ জীবনের টানাপোড়েন অত্যন্ত বাস্তব ও তীক্ষ্ণভাবে তুলে ধরেছেন।
গল্পের প্রেক্ষাপট:
"ওঙ্কার" মূলত বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজের প্রতিচ্ছবি। এখানে কৃষক, মজুর এবং ভূমিহীন মানুষের জীবনসংগ্রাম, নির্যাতন, এবং তাদের প্রতিরোধের গল্প তুলে ধরা হয়েছে। এটি একদিকে মানুষের মানবিক দুর্দশার ছবি আঁকে, অন্যদিকে সমাজে শোষকদের ভূমিকার একটি নির্মম চিত্র তুলে ধরে।
প্রধান চরিত্র:
উপন্যাসে কোনো নির্দিষ্ট প্রধান চরিত্র নেই। বরং এটি সমষ্টিগত চরিত্র এবং তাদের সংগ্রামের মাধ্যমে গ্রামীণ সমাজের বাস্তবতা তুলে ধরে। কৃষকদের দুঃখ-দুর্দশা, জমিদার ও মহাজনদের শোষণ, এবং সাধারণ মানুষের প্রতিবাদ এর মূল উপজীব্য।
প্রধান থিম:
1. শোষণ ও বৈষম্য: গ্রামীণ সমাজে ধনী-গরিবের শ্রেণিবৈষম্য এবং শোষণের ভয়াবহ রূপ স্পষ্ট।
2. সংগ্রাম: নিম্নবিত্ত মানুষের জীবনের প্রতিদিনের সংগ্রাম এবং শোষকদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার ইচ্ছা।
3. প্রকৃতি ও সমাজ: ছফার লেখায় গ্রামীণ জীবনের সাথে প্রকৃতির গভীর সম্পর্ক অত্যন্ত সুস্পষ্ট।
ভাষাশৈলী ও কাঠামো:
ছফার লেখনী তীক্ষ্ণ, সরল এবং সুনির্দিষ্ট। উপন্যাসে তিনি গল্প বলার চেয়ে সমাজের বাস্তবতা ফুটিয়ে তোলার দিকে বেশি মনোযোগ দিয়েছেন। ভাষা প্রাঞ্জল ও সহজ, যা গ্রামীণ পরিবেশ এবং চরিত্রগুলোর সাথে মানানসই।
মূল বার্তা:
"ওঙ্কার" কেবল একটি সাহিত্যকর্ম নয়; এটি একটি প্রতিবাদ, একটি চেতনা। ছফা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেন সমাজের অন্ধকার দিকগুলো এবং কীভাবে মানুষ সেই অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে লড়াই করে টিকে থাকে।
পাঠপ্রতিক্রিয়া:
এই উপন্যাস আমাদের সমাজের গভীরে লুকিয়ে থাকা সমস্যাগুলো উপলব্ধি করায়। এটি একদিকে পাঠককে শোষিত মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল করে তোলে, অন্যদিকে বিদ্রোহের চেতনা জাগ্রত করে। আহমদ ছফার সাহিত্যের জন্য এটি একটি শক্তিশালী সূচনা, যা তার পরবর্তী কাজগুলোতেও গভীর প্রভাব ফেলেছে।