অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা
অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা
Couldn't load pickup availability
বই পর্যালোচনা: "অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা" – মেজর এম এ জলিল
মেজর এম এ জলিলের লেখা "অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা" বইটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক গুরুত্বপূর্ণ দিকের উপর আলোকপাত করে। বইটির মাধ্যমে লেখক স্বাধীনতার পরবর্তী বাংলাদেশে যে রাজনীতি ও সামাজিক পরিবর্তন ঘটেছিল, বিশেষ করে সেই পরিবর্তনগুলোর মধ্য দিয়ে মানুষের জীবনে আসা নতুন ধরনের বিপর্যয় ও চ্যালেঞ্জের চিত্র তুলে ধরেছেন। মেজর জলিল তার অভিজ্ঞতা, পর্যবেক্ষণ এবং গভীর বিশ্লেষণের মাধ্যমে এক নতুন দৃষ্টিকোণ উপস্থাপন করেছেন, যা পাঠকদের স্বাধীনতা ও পরাধীনতার সম্পর্ক নিয়ে ভাবতে উদ্বুদ্ধ করবে।
বইয়ের বিষয়বস্তু:
বইটির মূল বার্তা হলো, স্বাধীনতা অর্জন করার পর যখন সুষ্ঠু শাসন ব্যবস্থা ও সুরক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত না হয়, তখন সেই স্বাধীনতা আসলে পরাধীনতার সমান হয়ে দাঁড়ায়। লেখক মূলত স্বাধীনতার পরের সময়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতির বিশ্লেষণ করেছেন, যেখানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বজায় রাখতে, সঠিক নেতৃত্বের অভাব এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়েছিল।
মেজর এম এ জলিল, যিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং পরে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীতে উচ্চ পদে কর্মরত ছিলেন, তার অভিজ্ঞতা থেকে এই বইতে তিনি তুলে ধরেছেন, কিভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর হীন স্বার্থপরতা, ক্ষমতার লোভ, এবং সামরিক শাসন দেশকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। বইটিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপরীতে গঠিত রাজনৈতিক বাস্তবতা এবং স্বাধীনতার পরবর্তী যেসব সিদ্ধান্ত ভুল ছিল, সেগুলোর উপর গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করা হয়েছে।
লেখকের দৃষ্টিভঙ্গি:
মেজর এম এ জলিল তার লেখায় খুবই বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েছেন। তিনি যেভাবে রাজনৈতিক এবং সামাজিক অস্থিরতার সময়গুলো বর্ণনা করেছেন, তা পাঠকদের মনে নানা প্রশ্ন তুলবে। লেখক স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে রাজনীতি এবং শাসন ব্যবস্থার মধ্যে যে দূরত্ব ছিল, তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অনেক কঠিন সত্য উন্মোচন করেছেন। তিনি মূলত এর মাধ্যমে বলতে চেয়েছেন যে, স্বাধীনতা কেবল রাজনৈতিক স্বাধীনতা নয়, বরং অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মাধ্যমেও পূর্ণতা পায়।
বইটির শক্তি:
এই বইটির সবচেয়ে বড় শক্তি হলো এর সময়োপযোগী এবং বাস্তবভিত্তিক বিশ্লেষণ। মেজর জলিল স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে নানা সমস্যা এবং অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং সেগুলোর প্রতি তার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বইটি দেশের নাগরিকদের, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে, স্বাধীনতা ও পরাধীনতার প্রকৃত সংজ্ঞা ও তার বাস্তবতা সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করতে সহায়ক। লেখকের মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতা এবং সামরিক দৃষ্টিকোণ বইটিকে আরও বেশি প্রামাণ্য এবং বিশ্বাসযোগ্য করে তুলেছে।
দুর্বলতা:
বইটির কিছু পাঠক হয়তো মনে করতে পারেন যে লেখক একটু বেশি সমালোচনামূলক হয়েছেন এবং এতে কিছুটা একপেশে দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে পারে। এটি শুধুমাত্র দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং নেতৃত্বের দুর্বলতার দিকগুলোর উপর বেশি ফোকাস করেছে, যা কিছু ক্ষেত্রে পাঠকের কাছে খাটো বা অসম্পূর্ণ মনে হতে পারে। তবে, বইটির মূল উদ্দেশ্য ছিল স্বাধীনতা অর্জনের পরের রাজনৈতিক বাস্তবতা তুলে ধরা, যা লেখক খুব সফলভাবে করেছেন।
উপসংহার:
অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা বইটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং স্বাধীনতার পরের সময়কাল নিয়ে গভীর বিশ্লেষণ প্রদান করেছে। এটি দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক ইতিহাসের প্রতি এক ধরনের স্বচ্ছ ও নির্মম দৃষ্টিকোণ উপস্থাপন করে, যা পাঠকদের নতুন করে ভাবতে বাধ্য করবে। যারা বাংলাদেশের ইতিহাস, বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধ ও পরবর্তী রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে আগ্রহী, তাদের জন্য এই বইটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
Share
