
শহর-ইয়ার (হার্ডকভার)
Reliable shipping
Flexible returns
শহর-ইয়ার (হার্ডকভার) - সৈয়দ মুজতবা আলী: বই পর্যালোচনা
সৈয়দ মুজতবা আলী বাংলা সাহিত্য জগতের এক প্রখ্যাত রচয়িতা, যিনি তাঁর অনবদ্য ভ্রমণকাহিনি, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও সমাজবোধের মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যের ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করেছেন। শহর-ইয়ার তাঁর অন্যতম সেরা রচনা, যা পাঠকদের একটি অনন্য ভ্রমণ অভিজ্ঞতার মধ্যে নিয়ে যায়।
বইয়ের পরিচিতি:
শহর-ইয়ার একটি ভ্রমণকাহিনি, যা সৈয়দ মুজতবা আলীর দৃষ্টিতে তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরের জীবনের এক চিত্র তুলে ধরে। শহর-ইয়ার শব্দটির অর্থ "প্রিয় শহর" বা "প্রেমের শহর"—এখানে লেখক ইস্তাম্বুল শহরের রূপ, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং সেখানে বসবাসকারী মানুষের মনস্তত্ত্ব তুলে ধরেছেন।
বইটি হার্ডকভার সংস্করণে প্রকাশিত হওয়ায়, এর আকর্ষণীয় প্রচ্ছদ ও উচ্চমানের কাগজের ব্যবহার পাঠককে এক ভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতা দেয়। এই বইয়ের মধ্যে লেখক তাঁর ভ্রমণ অভিজ্ঞতার পাশাপাশি মানব সমাজ, দর্শন, ইতিহাস এবং প্রেমের রহস্যও আবিষ্কার করেছেন।
বইয়ের বিষয়বস্তু:
শহর-ইয়ার বইটি মূলত ইস্তাম্বুল শহরের মধ্য দিয়ে লেখকের ভ্রমণকাহিনি এবং তার গভীর অনুভূতি ও দর্শনের এক সংকলন। লেখক তুরস্কের ঐতিহাসিক স্থানগুলো, এর মুসলিম ঐতিহ্য, অটোমান সাম্রাজ্যের ইতিহাস এবং আধুনিক ইস্তাম্বুলের সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য সম্পর্কে তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। তবে মুজতবা আলী এখানেও শুধু ভ্রমণ বর্ণনা করেননি, বরং শহরের মানুষের জীবনযাত্রা, তাদের মনোভাব, সংস্কৃতি এবং সামাজিক অবস্থা নিয়ে বিশ্লেষণ করেছেন।
এছাড়া, বইটি শুধু শহরের বাইরের চিত্র নয়, শহরের অন্তরঙ্গ দিক, সেখানে বসবাসকারী মানুষের অনুভূতিও লেখক তুলে ধরেছেন। এই বইয়ে তাঁর মেধা, চিন্তাভাবনা এবং লেখনীশক্তির পরিচয় পাওয়া যায়, যা পাঠককে তুরস্কের এক অপরিচিত দুনিয়ায় নিয়ে যেতে সক্ষম।
লেখকের শৈলী:
সৈয়দ মুজতবা আলী তাঁর লেখনির মধ্যে একটি স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখেন। তাঁর ভাষা মধুর, সাবলীল এবং বোধগম্য। তিনি নানা ধরনের মজার গল্প, উপমা, ব্যঙ্গ এবং মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে লেখেন, যা পাঠকদের চিন্তার সীমানা প্রসারিত করে। তাঁর ভ্রমণকাহিনির বৈশিষ্ট্য হল, তিনি শুধু স্থান বা দৃশ্য বর্ণনা করেন না, বরং প্রতিটি জায়গা বা মানুষের মধ্যে বিশেষ এক অনুভূতি বা দর্শন খোঁজার চেষ্টা করেন। শহর-ইয়ার বইটিতেও এটি প্রবলভাবে লক্ষ্য করা যায়।
বইটির বিশেষত্ব:
শহর-ইয়ার বইটির বিশেষত্ব হলো এর মাধ্যমে মুজতবা আলী যে সমাজ, সংস্কৃতি, ধর্ম ও ইতিহাসের গভীর বিশ্লেষণ করেছেন, তা পাঠকদের কাছে একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আসে। তিনি ইস্তাম্বুল শহরের বাস্তবতা ও তার ঐতিহ্য সম্পর্কে পাঠকদের জানিয়ে দেন, সেই সাথে শহরের মধ্যে বাস করা মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি ও জীবনযাত্রার পার্থক্যও উপস্থাপন করেন। লেখক তাঁর বর্ণনায় কখনও ইতিহাসের রঙ ছড়িয়ে দেন, কখনও আবার সমাজের রূঢ়তা ও বিচিত্রতা নিয়ে হাস্যরস বা ব্যঙ্গ করেন।
বইটির একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, এটি একপ্রকারের সেতু হিসেবে কাজ করে—পশ্চিমের আধুনিকতা এবং পূর্বের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির মাঝে। লেখক এক দিকে ইস্তাম্বুল শহরের আধ্যাত্মিক, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য নিয়ে কথা বলেন, অন্যদিকে আধুনিক যুগের প্রতিচ্ছবি এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতার কথাও তুলে ধরেন।
সারসংক্ষেপ:
শহর-ইয়ার একটি নিঃসন্দেহে অসাধারণ ভ্রমণকাহিনি, যা শুধু ভ্রমণের বর্ণনা নয়, বরং মানবজীবন, ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং সমাজের গভীরতা নিয়ে লেখকের চিন্তার প্রতিফলন। মুজতবা আলীর লেখনির শৈলী এবং তাঁর ভাবনাচিন্তার গভীরতা বইটিকে একটি অমূল্য রচনা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
পাঠকরা এই বইটি পড়ে কেবল ইস্তাম্বুল শহরেরই নয়, বরং মানবসমাজের নানা দিকের একটি সুন্দর ও চিন্তাশীল দৃষ্টিভঙ্গি পাবেন। মুজতবা আলী তাঁর অনন্য লেখনী দ্বারা এই শহরকে কেবল একটি ভ্রমণস্থল নয়, বরং একটি দার্শনিক উপলব্ধি ও আবেগের জায়গা হিসেবে চিত্রিত করেছেন।