এক পয়সার বাঁশি-জসীমউদ্দিন
এক পয়সার বাঁশি-জসীমউদ্দিন
Share
বই: এক পয়সার বাঁশি
লেখক: জসীমউদ্দিন
রিভিউ:
"এক পয়সার বাঁশি" জসীমউদ্দিনের একটি জনপ্রিয় গল্প, যা তার গল্প লেখার অসাধারণ দক্ষতা এবং সমাজের প্রতি তার গভীর অনুভূতির প্রতিফলন। এই গল্পটি একটি ছোট শিশু, বাচ্চু, এবং তার এক পয়সার বাঁশির মাধ্যমে মানুষের দুঃখ-সুখ, স্বপ্ন এবং জীবনযুদ্ধে মানুষের চাওয়া-পাওয়া সম্পর্কে গভীরভাবে আলোচনাপূর্ণ। গল্পটির মাধ্যমে জসীমউদ্দিন শৈশবের নিস্পাপতা, দারিদ্র্য, কষ্ট, এবং একজন শিশুর আশা-আকাঙ্ক্ষাকে তুলে ধরেছেন।
গল্পটির কেন্দ্রীয় চরিত্র বাচ্চু, একটি দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া এক শিশু, যার কাছে একটি এক পয়সার বাঁশি থাকে। বাঁশিটি তার জন্য শুধু একটি খেলনা নয়, বরং তার জীবনের একমাত্র সান্ত্বনা এবং আনন্দের উৎস। গল্পটি একদিকে শিশুদের শুদ্ধতাকে ফুটিয়ে তুলেছে, অন্যদিকে সামাজিক বৈষম্য এবং মানুষের অবস্থা সম্পর্কে নীরব প্রতিবাদও প্রকাশ করেছে। বাচ্চুর এক পয়সার বাঁশির মাধ্যমে জসীমউদ্দিন সমাজের চূড়ান্ত দারিদ্র্য, ক্ষুধা এবং প্রাপ্যতার সংকট তুলে ধরেছেন, যেখানে ছোট ছোট আনন্দগুলোই জীবনের বড় সৌন্দর্য হয়ে ওঠে।
বিশ্লেষণ:
"এক পয়সার বাঁশি" গল্পটি তার গভীর মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির জন্য বিশেষভাবে প্রশংসিত। গল্পে জসীমউদ্দিন মানবতার প্রতি তার অকৃত্রিম ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন, যেখানে সমাজের এক অংশের জীবনযাত্রার দুঃখ-কষ্টের মধ্যে একটি শিশু কীভাবে তার আশাভরী জীবনের পথে চলতে থাকে, তা চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে। গল্পটি খুবই সরল, তবে এর মধ্যে রয়েছে এক ধরনের গম্ভীর সামাজিক বার্তা।
গল্পের শেষের দিকে, বাচ্চু যখন বাঁশি হারায়, তখন তার অন্তর থেকে এক ধরনের নিষ্পাপ কষ্ট, দুঃখ এবং আত্মত্যাগের পরিচয় পাওয়া যায়। গল্পের মাধ্যমে পাঠক বুঝতে পারে যে, জীবনের ছোট ছোট আনন্দের মধ্যে যে দুঃখ-দুর্দশা লুকিয়ে থাকে, তা কখনো কখনো জীবনের চরম সত্য হয়ে ওঠে।
উপসংহার:
"এক পয়সার বাঁশি" জসীমউদ্দিনের একটি চিরকালীন রচনা, যা কেবল একটি শিশু এবং তার খেলনার গল্প নয়, বরং এক মানবিক চিত্র, যা সমাজের দরিদ্রতা, কষ্ট, এবং মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে অবলম্বন করে রচিত। এই গল্পটি আমাদের শিখায় যে, জীবনে কখনো কখনো ছোট ছোট দুঃখ ও আনন্দের মধ্যেও বৃহত্তর সত্য এবং মানবিকতা বিদ্যমান। এটি একটি ছোট শিশুর দৃষ্টিতে সমাজের জটিলতার একটি সরল কিন্তু গভীর বর্ণনা।